মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪

ওয়াকিং পাম (হেটে বেড়ায় যে গাছ)

 

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অরণ্যের মধ্যে ছড়িয়ে আছে এমন কিছু গাছ যার বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আজ সত্যিই আমাদের অবাক করে। এরকমই একটি বিশেষ উদ্ভিদের কথা আজ আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরব। আসুন জেনে নিই এই বিশেষ উদ্ভিদের সম্বন্ধে কিছু তথ্য।
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সুমাকো বায়োস্ফিয়ার। মূলত এই বায়োস্ফিয়ারেই বাস ক্যাশাপোনা পাম গাছের। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে এই সংরক্ষিত অরণ্যে গবেষণা করতে গিয়ে আশ্চর্য এই উদ্ভিদ প্রজাতির সন্ধান পান স্লোভাক ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সেসের গবেষক পিটার ভ্রানস্কি।
এই সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে শুধু এই বিশেষ উদ্ভিদ প্রজাতিই নয় তার সঙ্গে ব্যাঙ, আরশোলা-সহ একাধিক নতুন প্রাণী প্রজাতিরও আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। ভ্রানস্কি সে-সময় দাবি করেন, তাঁর আবিষ্কৃত এই নতুন উদ্ভিদটি তার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম। অবশ্য তাঁর এই দাবিকে সে-সময় সাদরে গ্রহণ করেনি বিজ্ঞানীমহল। অনেকেই তা হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
সেই গবেষণার উপরে ভিত্তি করে ১৯৮০-র দশকে ইকুয়েডরের এই আমাজনিয়ান অরণ্যে পুনরায় একটি অভিযান চালান জীববিজ্ঞানী জন এইচ বোদলে এবং তার দলবল। তিনিই দীর্ঘদিন এই অরণ্যে অবস্থান করে পর্যবেক্ষণ করেন এই বিশেষ গাছের গতিবিধি এবং তাদের জীবনপদ্ধতি। বোদলের নেপথ্যেই সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে গৃহীত হয় চলমান উদ্ভিদের অস্তিত্বের কথা। এই জীববিজ্ঞানীর কথাতেই এই বিশেষ উদ্ভিদটিকে ঘিরে প্রথম বিশ্ব বিজ্ঞান মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
এই গানটি সাধারণত ১৮-২০ মিটার বা ৬০-৭০ ফুট লম্বা হতে পারে। অবশ্য ইকুয়েডরের এই উদ্ভিদ প্রজাতির বাহ্যিক গঠন অনেকটা সুন্দরবনের সুন্দরী জাতীয় ম্যানগ্রোভ গাছের মতো। আসলে সুন্দরী ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ হওয়ায় যেমন শ্বাসমূল দেখা যায় তাদের দেহে, ঠিক তেমনই দেখা যায় ঠেসমূলের উপস্থিতিও। ইকুয়েডরের এই ‘ওয়াকিং পাম’-এর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অনেকটা একইরকম।
ইকুয়েডরের এই বিশেষ অঞ্চলের মাটি আলগা হওয়ায় এবং সেখানে মাটির জলধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম। পাশাপাশি গভীর অরন্যের সব জায়গায় সূর্যালোক প্রবেশ করতে না-পারায় এই বিশেষ পাম জাতীয় উদ্ভিদটি অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। ক্রমাগত এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিতেই ‘ওয়াকিং পাম’-এর শিকড়ের দৈর্ঘ্য অন্যান্য গাছের থেকে অনেকটাই বড়ো। আয়তন বা পরিধির দিক থেকে দেখতে গেলেও তা যথেষ্টই মোটা।
এগুলি দেখতে অনেকটা হাতির শুঁড়ের মতো। পাশাপাশি অত্যন্ত দ্রুত নতুন নতুন ঠেসমূল তৈরি করে সক্ষম ‘ওয়াকিং পাম’। একদিকে যেমন এই উদ্ভিদ নতুন উদ্ভিদ তৈরি করে, তেমনই পুরানো ঠেসমূল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় গাছের দেহ থেকে। অন্যদিকে গাছের মূল কাণ্ড ধীরে ধীরে সরে যায় তার মূল অবস্থান থেকে। এভাবেই দিনের পর দিন অল্প অল্প করে স্থান পরিবর্তন করে এই গাছ।
জীববিজ্ঞানীদের বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও গবেষণা বলছে প্রতিদিন দেড় থেকে দু সেন্টিমিটার সরণ হয় এই জাতীয় গাছের। কখনও কখনও সেটা আবার দিনে ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্তও অবস্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম হয় ওয়াকিং পাম। বছরের হিসাবে এই দূরত্ব কম নয় মোটেই। প্রতিবছর কমপক্ষে প্রায় নিজের অবস্থান ২০ মিটার পর্যন্ত সরে যায় এই গাছ।
তবে শুধুমাত্র ওয়াকিং পামই নয়, ইকুয়েডরের এই সুমাকো বায়োস্ফিয়ারে রয়েছে এমন বেশ কিছু আশ্চর্য গিরগিটি এবং ব্যাঙের প্রজাতিও। যা এই অরণ্য ছাড়া বিশ্বের আর কোনো প্রান্তেই দেখতে পাওয়া যায় না। আর সেই কারণেই একুশ শতকের শুরুতে ইকুয়েডরের এই সংরক্ষিত অরণ্যকে " হার্ট অফ দ্য ইউনেস্কো " ইউনেস্কো। প্রাণী ও উদ্ভিদ সবকিছু মিলিয়ে এই অরণ্য যেন আক্ষরিক অর্থেই জীববিজ্ঞানের এক আশ্চর্য জাদুঘর।
(ছবি ও লেখা কালেক্টেড)

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন