পৃথিবীর ‘একমাত্র ফুটন্ত নদী’ (Only Boiling River in the World) হল দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর শানায়-তিমপিশকা (Shanay-timpishka), যা 'লা বম্বা' (La Bomba) নামেও পরিচিত। শানায় শব্দটির অর্থ সূর্যের তাপ এবং তিমপিশকা শব্দটির অর্থ ফুটন্ত। ৪ মাইল বা ৬.৪ কিমি দীর্ঘ এই নদীটি দক্ষিণ আমেরিকার বিখ্যাত আমাজন নদী ব্যবস্থার অন্তর্গত। শানায়-তিমপিশকা নদীটি পেরুর পুয়ের্তো ইনকা প্রদেশের মায়ানটুয়াকু অভয়ারণ্যের অন্তর্গত। নদীটি চওড়ায় প্রায় ২৫ মিটার এবং সর্বাধিক গভীরতা ৬.১ মিটার। কোনোক্রমে পিছলে গিয়ে শানায়-তিমপিশকায় পড়ে গেলে, বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ফুটন্ত জলেতে দেহ মারাত্মকভাবে পুড়ে যায় ১ সেকেন্ডেরও কম সময়ে। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, এই নদীর নিরাময় ক্ষমতা আছে। ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে এই নদীর জল পরীক্ষা করেছিলেন ভূ-তাপীয় বিজ্ঞানী আন্দ্রেস রুজো। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন, নদীটির জলের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি থেকে প্রায় ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে! নদীর তীরের মাটি এতই তেতে থাকে যে সেখানে পা ফেলার জো থাকে না!
কেন এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রা? শানায়-তিমপিশকার আশপাশে কোনো সক্রিয় আগ্নেয়গিরি নেই। কোনো ভূতাপীয় ফাটলও খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এই নদীকে ‘সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত নদী’ বলে অভিহিত করেছে। এই নদীর তাপের উৎস সম্পর্কে বলতে গিয়ে ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’ বলেছে, এর পেছনে কাজ করছে পৃথিবীর ভূতাপীয় অবক্রম (Geothermal Gradient)। পৃথিবীর অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান গভীরতার সাপেক্ষে তাপমাত্রার ক্রমবর্ধমান হারকে বলে ভূতাপীয় অবক্রম বলে। গবেষকেরা বলছেন, আমাজন অরণ্যের ওপর যে বৃষ্টি ঝরে পড়ে, সেই বৃষ্টির জল গভীর চ্যুতির মধ্য দিয়ে পৌঁছে যায় পৃথিবীর ভূত্বকের তলদেশে। আর ভূতাপীয় গ্রেডিয়েন্টের প্রভাবে ওই জল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ধারণা করা হয়, উষ্ণ প্রস্রবণের ওই উত্তপ্ত জলকে পুনরায় ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি নিয়ে আসে। এ কারণেই শানায়-তিমপিশকা নদীতে জল ফুটছে টগবগ করে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন